বিশেষ প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি।।
ডেস্ক নিউজ:
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত আসার চেয়ে ঋণ বিতরণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ বিতরণে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর গত এক বছরে এই প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে আলোচ্য তিন মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আড়াই শতাংশেরও কম। আর বছরের ব্যবধানে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশের মতো। এছাড়া এ সেবা ব্যবহার করে রেমিট্যান্স প্রেরণও বাড়ছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবাকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটা ব্যাংকের খরচও বাঁচিয়েছে। গ্রাহকও কম খরচে এবং দ্রুত সময়ে ব্যাংকে না গিয়েও প্রায় সব সেবা পাচ্ছেন এজেন্ট বুথে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ।
এজেন্ট ব্যাংকিং হলো শাখা না খুলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লি এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং করার সুযোগ দেওয়া হলেও পরের বছর নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে পৌর ও শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর সুযোগ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংকে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যার সবগুলোই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসাবাড়ির নিচে বা বাসাবাড়ি থেকে একটু দূরে স্থানীয় হাট-বাজারে এজেন্ট আউটলেট বা বুথেই ব্যাংকের মতো প্রায় সব ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। এ সেবায় বাড়তি কোনো চার্জও নেই। এছাড়া ডেবিট কার্ড, চেকবই ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সুবিধাও নিতে পারেন এজেন্ট ব্যংকিংয়ের গ্রাহকরা। ফলে এ সেবার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতি ত্রৈমাসিকে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় গ্রাহকদের খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৭১ হাজার ৪২২টি, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ২৩০টি। ফলে তিন মাসেই এই সেবার আওতায় গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৯২ জন। এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৫৩ জন। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারীর মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন এক কোটি ২১ লাখ ৮৮ হাজার ৪২৪ জন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সাল শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৭ কোটি টাকা বা দুই দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ২৪ হাজার ২৮ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে এ সেবায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় দুই হাজার ৬০৯ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিং-সংশ্লিষ্টরা বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে ঋণ আবেদনের জন্য বিদ্যমান সহজ পদ্ধতি, যা গ্রাহকবান্ধব এবং সময় ও অর্থসাশ্রয়ী। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র থেকে ঋণ নিতে গ্রাহককে বাড়ি থেকে দূরে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না।
শুধু আমানত ও ঋণ বিতরণই নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বিতরণও বাড়ছে। প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় গত তিন মাসে রেমিট্যান্স বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে রেমিট্যান্স বিতরণ বেড়েছে ৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।